‘ছাত্রজনতা হত্যায় অস্ত্র সরবরাহ করে সাবেক ১০ এমপিসহ ৯৫ জন’


বাংলাদেশের জুলাই ও আগস্ট মাসের ঘটনাবলি নিয়ে তদন্ত প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিসকে (ওএইচসিএইচআর)। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ ওএইচসিএইচআরকে ৯৫ জন পুলিশ, আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সদস্যের নাম ও পদবি প্রদান করেছে, যারা বিক্ষোভের সময় সহিংস হামলায় নাগরিকদের অস্ত্র সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে ১০ জন তৎকালীন সংসদ সদস্য, ১৪ জন আওয়ামী লীগ নেতা, ১৬ জন যুবলীগ নেতা, ১৬ জন ছাত্রলীগ নেতা এবং ৭ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন।

সবচেয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা ও প্রতিবেদনের জন্য ওএইচসিএইচআরকে ধন্যবাদ জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে ওএইচসিএইচআর তাদের এই তদন্ত করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হাসিনা সরকার এবং আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী ও নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা ব্যাপক এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটেছে। যার মধ্যে রয়েছে বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ।

প্রতিবেদনে ওএইচসিএইচআর জানায়, আগের সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা, সহিংস আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সাথে মিলে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত ছিল। এর মধ্যে শত শত বিচার বহির্ভূত হত্যা, হাজার হাজার বিক্ষোভকারীদের গুরুতরভাবে আহত করার মতো বলপ্রয়োগের ঘটনা, ব্যাপক নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক, এবং নির্যাতনসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণের ঘটনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ওএইচসিএইচআর ধারণা করছে, এই সমস্ত লঙ্ঘন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় পরিচালিত হয়েছিল।

প্রতিবেদনের আরও একটি অংশে বলা হয়: ওএইচসিএইচআর ধারণা করছে, বিক্ষোভ চলাকালীন ১,৪০০ জনের মতো মানুষ মারা যেতে পারে, যার বেশিরভাগই বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত সামরিক রাইফেল এবং মারণক্ষম ধাতব গুলি দ্বারা নিহত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ গুরুতর, প্রায়শই স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পুলিশ ও র‌্যাবের মতে, ১১,৭০০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আটক করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু ছিল। পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীও শিশুদের লক্ষ্য করে হত্যা, ইচ্ছাকৃত অঙ্গহানি, নির্বিচারে আটক, অমানবিক অবস্থায় বন্দিত্ব এবং নির্যাতনের মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। বিক্ষোভের প্রথম পর্যায়ে নারী ও কিশোরীরা বিশেষভাবে নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছিল। তারা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, ধর্ষণের হুমকি, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিল।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post

Popular Items